ঢাকা ০২:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুবলীগ নেতাকে সমঝোতার পর আ.লীগ নেতার মুক্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৩২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭
  • ২২৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অফিসার্স ক্লাবে মাতাল অবস্থায় তর্কাতর্কির একপর্যায়ে এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করার ঘটনায় আটকের প্রায় ২১ ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনা নিয়ে মঞ্জুর সঙ্গে অন্য পক্ষের সমঝোতার পর অভিযোগ প্রত্যাহার হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু এক সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জু ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অফিসার্স ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন। মঞ্জুরুলের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায়। সেখানে আওয়ামী লীগের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন মঞ্জুরুল। সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলের ভেতরে বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

জয়নাল আবেদিন আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ঘনিষ্ঠজন। অফিসার্স ক্লাবের সমাজসেবা সম্পাদক পদে রয়েছেন তিনি।

শনিবার রাত ১২ টার দিকে নগরীর আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন অফিসার্স ক্লাবের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়।  রাতে দু’জনই অফিসার্স ক্লাবে ছিলেন। ক্লাবের ভেতরে কথা কাটাকাটির পর বের হয়ে দুজন ঝগড়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে মঞ্জুরুল তার পিস্তল বের করে জয়নালকে গুলি করেন। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মঞ্জুরুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আহত জয়নালকে রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়েছে।

এদিকে মঞ্জুকে আটকের খবর পেয়ে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত নগরীর অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে অবরোধ করে তার অনুসারী দলীয় নেতা-কর্মীরা। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল সমাবেশ করে তারা। বেলা ১টার দিকে পুলিশ বুঝিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সূত্রমতে, রোববার সকালে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন থানায় গিয়ে মঞ্জুকে ছাড়ানোর তদবির করেন। এসময় গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম এবং কেন্দ্রের বেশ কয়েকজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপ দেন। কিন্তু পুলিশ একজন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে মঞ্জুকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তাকে ছাড়তে অপারগতা প্রকাশ করেন।

রোববার দুপুরে জয়নাল আবেদিনের ভাই চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য এস এম আলমগীর মামলার এজাহার থানায় জমা দেন।  তবে সেটি পুলিশ মামলা হিসেবে রেকর্ড না করে রেখে দেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন পর্যায় থেকে মঞ্জুরুলকে ছাড়ানোর তদবির শুরু করেন। পর্দার আড়ালে জয়নালের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলে। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কোতোয়ালি থানা থেকে মঞ্জুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, অনেকেই থানায় ফোন করেছেন। সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন ভাই, বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির ভাইও ফোন করেছেন। রাউজানের উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার বাবুল ভাইও থানায় গিয়েছিলেন। আফটার অল, মঞ্জু তো আওয়ামী লীগের নেতা। ভাইয়ে ভাইয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।  এটাকে আর বাড়তে দেওয়া উচিৎ নয়।

সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হয়ে গেছে। আলমগীর ইমোশনাল ছিলেন।  সেজন্য এজাহার দিয়েছেন। পরে সেটা তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ওসি মো.জসিম উদ্দিন বলেন, দুই পক্ষের সমঝোতার পর ভিকটিম তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মঞ্জুরুল আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়ে গুলিবিদ্ধ জয়নালের ভাই এস এম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রোববার রাতে ছাড়া পাওয়ার পর মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সমাধান হয়ে গেছে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমি অফিসার্স ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। ক্লাবের নির্দেশনা আছে আন-রেজিস্ট্রার্ড (সদস্য নয় এমন) কেউ ক্লাবে আসবে না। শনিবার রাতে এরকম একজন ক্লাবে আসায় আমি কেন এসেছে তা জানতে চাই। তখনই জয়নাল আমার সাথে দুর্বব্যবহার করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হলে আমার কোমরে থাকা পিস্তল থেকে গুলি বেরিয়ে যায়।

সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে একজনকে আহতের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন কোন উত্তর দেননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যুবলীগ নেতাকে সমঝোতার পর আ.লীগ নেতার মুক্তি

আপডেট টাইম : ০২:৩২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অফিসার্স ক্লাবে মাতাল অবস্থায় তর্কাতর্কির একপর্যায়ে এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করার ঘটনায় আটকের প্রায় ২১ ঘণ্টা পর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনা নিয়ে মঞ্জুর সঙ্গে অন্য পক্ষের সমঝোতার পর অভিযোগ প্রত্যাহার হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু এক সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মঞ্জু ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অফিসার্স ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বও তিনি পালন করছেন। মঞ্জুরুলের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায়। সেখানে আওয়ামী লীগের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন মঞ্জুরুল। সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলের ভেতরে বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

জয়নাল আবেদিন আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ঘনিষ্ঠজন। অফিসার্স ক্লাবের সমাজসেবা সম্পাদক পদে রয়েছেন তিনি।

শনিবার রাত ১২ টার দিকে নগরীর আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন অফিসার্স ক্লাবের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয়।  রাতে দু’জনই অফিসার্স ক্লাবে ছিলেন। ক্লাবের ভেতরে কথা কাটাকাটির পর বের হয়ে দুজন ঝগড়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে মঞ্জুরুল তার পিস্তল বের করে জয়নালকে গুলি করেন। এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মঞ্জুরুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আহত জয়নালকে রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়েছে।

এদিকে মঞ্জুকে আটকের খবর পেয়ে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত নগরীর অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশে অবরোধ করে তার অনুসারী দলীয় নেতা-কর্মীরা। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল সমাবেশ করে তারা। বেলা ১টার দিকে পুলিশ বুঝিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

সূত্রমতে, রোববার সকালে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মিরসরাইয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন থানায় গিয়ে মঞ্জুকে ছাড়ানোর তদবির করেন। এসময় গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম এবং কেন্দ্রের বেশ কয়েকজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তাদের চাপ দেন। কিন্তু পুলিশ একজন প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে মঞ্জুকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তাকে ছাড়তে অপারগতা প্রকাশ করেন।

রোববার দুপুরে জয়নাল আবেদিনের ভাই চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য এস এম আলমগীর মামলার এজাহার থানায় জমা দেন।  তবে সেটি পুলিশ মামলা হিসেবে রেকর্ড না করে রেখে দেয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন পর্যায় থেকে মঞ্জুরুলকে ছাড়ানোর তদবির শুরু করেন। পর্দার আড়ালে জয়নালের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলে। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে কোতোয়ালি থানা থেকে মঞ্জুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, অনেকেই থানায় ফোন করেছেন। সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন ভাই, বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির ভাইও ফোন করেছেন। রাউজানের উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার বাবুল ভাইও থানায় গিয়েছিলেন। আফটার অল, মঞ্জু তো আওয়ামী লীগের নেতা। ভাইয়ে ভাইয়ে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।  এটাকে আর বাড়তে দেওয়া উচিৎ নয়।

সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা হয়ে গেছে। আলমগীর ইমোশনাল ছিলেন।  সেজন্য এজাহার দিয়েছেন। পরে সেটা তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ওসি মো.জসিম উদ্দিন বলেন, দুই পক্ষের সমঝোতার পর ভিকটিম তার অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় মঞ্জুরুল আলমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে অভিযোগ প্রত্যাহারের বিষয়ে গুলিবিদ্ধ জয়নালের ভাই এস এম আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

রোববার রাতে ছাড়া পাওয়ার পর মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সমাধান হয়ে গেছে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমি অফিসার্স ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। ক্লাবের নির্দেশনা আছে আন-রেজিস্ট্রার্ড (সদস্য নয় এমন) কেউ ক্লাবে আসবে না। শনিবার রাতে এরকম একজন ক্লাবে আসায় আমি কেন এসেছে তা জানতে চাই। তখনই জয়নাল আমার সাথে দুর্বব্যবহার করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতি হলে আমার কোমরে থাকা পিস্তল থেকে গুলি বেরিয়ে যায়।

সরকারি অস্ত্র ব্যবহার করে প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করে একজনকে আহতের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন কোন উত্তর দেননি।